বাংলাদেশে মশারি শুধু একটি প্রয়োজন নয়, বরং একটি ঘরোয়া ঐতিহ্যও। তবে আপনি কি জানেন, এই সাধারণ মশারি এখন আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে? হ্যাঁ, একসময়ের সাধারণ গৃহস্থালী সামগ্রী মশারি (Mosquito Net) এখন বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের এক নতুন রপ্তানি সম্ভাবনার নাম।
এই প্রবন্ধে আমরা জানবো বাংলাদেশের মশারি রপ্তানি কিভাবে হয়, কোথায় যায়, এর চাহিদা কেমন, এবং আপনি চাইলে কীভাবে এ ব্যবসায় যুক্ত হতে পারেন।
বাংলাদেশে উৎপাদিত মশারির বিভিন্ন ধরন রয়েছে:
সাধারণ সুতি মশারি
পলিয়েস্টার বা নাইলনের মশারি
ভেক্টর কন্ট্রোল মশারি (Insecticide-treated nets - ITNs)
পোর্টেবল বা ট্রাভেল মশারি
ডেকোরেটিভ বেবি মশারি ও ক্যাম্পিং মশারি
এই মশারিগুলো শুধুমাত্র বাড়ির ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ নয় – বিদেশে এর ব্যবহার হচ্ছে ক্যাম্পিং, হোটেল, হাসপাতাল এবং দুর্যোগ-প্রবণ এলাকায়।
বাংলাদেশ থেকে মশারি রপ্তানি করা হয় মূলত নিম্নোক্ত দেশগুলোতে:
আফ্রিকার দেশসমূহ (কঙ্গো, নাইজার, নাইজেরিয়া, উগান্ডা)
ভারত ও নেপাল
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ (সৌদি আরব, কাতার, ওমান)
ক্যারিবিয়ান দেশসমূহ
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ (থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া)
লাতিন আমেরিকা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর প্রকল্পগুলোর জন্য আফ্রিকান অঞ্চলে বিশেষ মশারির চাহিদা থাকে।
Long-Lasting Insecticidal Net (LLIN):
রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়, যেমন ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে।
Double Layer Decorative Net:
ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিলাসবহুল ঘুমের পরিবেশে ব্যবহৃত হয়।
Foldable/Travel Net:
ট্রাভেলার ও ক্যাম্পিংয়ের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে মশারির চাহিদা বিশাল। UNICEF, WHO, Red Cross, এবং অন্যান্য NGO মশারি আমদানির অন্যতম বড় গ্রাহক।
2024 সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মশারি মার্কেটের গ্লোবাল ভ্যালু প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশের মশারি খাত খুব দ্রুত উন্নতি করছে। ঢাকার আশপাশে (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, কুমিল্লা) বহু মশারি তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সুতা ও পলিয়েস্টার ব্যবহার করে সাশ্রয়ী মশারি বানানো সম্ভব হচ্ছে।
উদাহরণ:
Walton ও Gazi গ্রুপ ইতিমধ্যেই Insecticidal-treated mosquito net উৎপাদন করছে।
ছোট উদ্যোক্তারা আমাজন, আলিবাবা ও ইবে-এর মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে এসব পণ্য বিক্রি করছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ২০-৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্যের মশারি রপ্তানি করা হচ্ছে, যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে আফ্রিকান দেশগুলোর স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশি মশারির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মশারি রপ্তানি বাংলাদেশ
Mosquito net export from Bangladesh
Insecticide treated net
মশারি ব্যবসা
মশারির আন্তর্জাতিক বাজার
WHO approved mosquito net
LLIN suppliers Bangladesh
ফোল্ডেবল মশারি
মশারির চাহিদা বিদেশে
Anti mosquito net export BD
আপনি চাইলে খুব সহজে একটি ক্ষুদ্র বা মাঝারি মশারি রপ্তানি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। নিচে ধাপগুলো দেওয়া হলো:
স্থানীয় উৎপাদক বা নিজস্ব ফ্যাক্টরি থেকে মশারি সংগ্রহ করুন।
রপ্তানিযোগ্য মানের উপাদান ব্যবহার করুন (ফায়ার রেটার্ডেন্ট, ইনসেক্টিসাইডযুক্ত, ইত্যাদি)।
কোন দেশে কী ধরনের মশারির চাহিদা বেশি, তা জেনে প্রোডাক্ট লাইন নির্ধারণ করুন।
বাংলাদেশ সরকারের Export Promotion Bureau (EPB) থেকে রপ্তানি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।
Alibaba, eibbuy.com, Amazon, বা আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রোডাক্ট লিস্ট করুন।
আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা
WHO/UNICEF এর approval পাওয়া
সময়মতো ডেলিভারি ও প্যাকেজিং উন্নত করা
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রোডাক্ট তৈরি করা
একটা সময় যেটা শুধুই ঘরের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতো, সেই মশারি এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ। বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা যদি মান বজায় রেখে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মশারি উৎপাদন করতে পারেন, তাহলে অচিরেই এই পণ্য দেশের অন্যতম রপ্তানি আয়ের উৎসে পরিণত হতে পারে।